কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ এবং তড়িচ্চালক বল

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | | NCTB BOOK

কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ : 

তড়িৎ কোষযুক্ত কোনো বর্তনীতে যখন প্রবাহ চলে তখন এই প্রবাহ কোষের ভেতরে তরল বা অন্যান্য পদার্থের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হয়। কোষের ভেতর তড়িৎ প্রবাহের দিক কোষের ঋণাত্মক পাত থেকে ধনাত্মক পাতের দিকে। এই পাতদ্বয়ের মধ্যকার বিভিন্ন পদার্থ তড়িৎ প্রবাহের বিরুদ্ধে যে বাধার সৃষ্টি করে তাকে কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ বলে। প্রত্যেক তড়িৎ উৎসের অর্থাৎ যার তড়িচ্চালক শক্তি থাকে তার একটি নিজস্ব রোধ থাকেই। একেই অভ্যন্তরীণ রোধ বলা হয়। একে সাধারণত দিয়ে প্রকাশ করা হয়। 

তড়িচ্চালক শক্তি ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক 

যে বর্তনীতে সর্বত্র একই প্রবাহ চলে তাকে সরল বর্তনী বলে। E তড়িচ্চালক শক্তি ও অভ্যন্তরীণ রোধের একটি কোষের সাথে R রোধের রোধক চাবি K এর সাহায্যে যুক্ত করে বর্তনী পূর্ণ করা হলো [চিত্র ৩.৩]। 

চিত্র : ৩.৩

চাবি বন্ধ করলে প্রবাহ চলে। ধরা যাক, এই প্রবাহের মান l কোষের তড়িচ্চালক শক্তি E ভোল্ট এর মানে | C আধানকে পূর্ণ বর্তনীতে A বিন্দু থেকে রোধক R এর মধ্যদিয়ে চালনা করে পুনরায় A-তে আনতে কোষ E জুল শক্তি সরবরাহ করে। এই E শক্তির এক অংশ v ব্যয় হয়। কুলম্ব আধানকে R-এর মধ্যদিয়ে A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে চালনা করতে এবং বাকি অংশ V" ব্যয়িত হয় অভ্যন্তরীণ রোধ। এর মধ্য দিয়ে B থেকে A-তে আধান চালনা করতে। সুতরাং শক্তির নিত্যতা সূত্রানুসারে,

E=V+V'

কিন্তু V হলো A ও B অর্থাৎ R এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য এবং V হলো অভ্যন্তরীণ রোধ - এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য। ও'মের সূত্র প্রয়োগ করে আমরা পাই,

V = IR এবং V = Ir

:- E = IR + Ir...  (3.10)

(3.9) এবং (3.10) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, তড়িচ্চালক শক্তি E-এর একটি অংশ " = Ir কোষের অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করতে ব্যবহৃত হয় এবং বাকি অংশ V = IR = E - IR ব্যবহৃত হয় বাইরের রোধের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করতে। বাইরের কাজের জন্য কোষের ক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত এই V = IR অংশকে কোষের প্রান্তীয় বিভব পার্থক্য বা প্রাপ্ত ভোল্ট বলে। যখন তড়িৎ প্রবাহ চলে তখন কোষের এই প্রান্তীয় বিভব পার্থক্য তড়িচ্চালক শক্তি E-এর চেয়ে lr পরিমাণ কম হয়।

কোষের তড়িচ্চালক শক্তির অংশ V' = Ir = E-IR যা কোষের ভেতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করতে ব্যয়িত হয় তাকে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ বিভব পতন বা হারানো ভোল্ট বা নষ্ট ভোল্ট বলে। কেননা তড়িৎ প্রবাহ চলাকালীন ভোল্টমিটারের সাহায্যে কোনো কোষের দুই পাতের বিভব পার্থক্য পরিমাপ করা হলে মুক্ত অবস্থার বিভব পার্থক্যের চেয়ে এই পরিমাণ বিভব পার্থক্য কম পাওয়া যায়।

:- E = IR (প্রান্তীয় ভোল্টেজ) + Ir (অভ্যন্তরীণ বিভব পতন)

Content added || updated By

কোষের সমন্বয়

শক্তিশালী প্রবাহ পাওয়ার জন্য একাধিক কোষ একত্রে ব্যবহার করাকে কোষের সমন্বয় বলে । কোষের সমন্বয়কে অনেক সময় সমবায়, সন্নিবেশ বা সমাবেশও বলে। একাধিক কোষ এক সাথে ব্যবহার করলে তাকে ব্যাটারিও বলা হয়। কোষের সমন্বয় দুই প্রকার হয়ে থাকে।

১.শ্রেণি সমন্বয় (Series combination )

 ২. সমান্তরাল সমন্বয় (Parallel combination )

১. শ্রেণি সমন্বয় (Series combination) :

কতগুলো তড়িৎ কোষ যদি পর পর এমনভাবে সাজানো থাকে যে, প্রথম কোষের ঋণাত্মক পাতের সাথে দ্বিতীয় কোষের ধনাত্মক পাত, দ্বিতীয় কোষের ঋণাত্মক পাতের সাথে তৃতীয় কোষের ধনাত্মক পাত এবং বাকিগুলো এরূপে সংযুক্ত থাকে তাকে শ্রেণি সমন্বয় বলে।

চিত্র :৩.৪

  প্রবাহ নির্ণয় : ধরা যাক, R মানের বাইরের রোধের সাথে সংখ্যক তড়িৎ কোষ শ্রেণি সমন্বয়ের যুক্ত আছে [চিত্র ৩:৪]। আরো ধরা যাক, প্রতিটি কোষের তড়িচ্চালক শক্তি E এবং অভ্যন্তরীণ রোধ r । সমন্বয়ের মোট তড়িচ্চালক শক্তি Es, এবং তুল্য অভ্যন্তরীণ রোধ rs হলে বর্তনীর প্রবাহ ls হবে, ও'মের সূত্রানুসারে Is=EsR+rs

কিন্তু কোষগুলো শ্রেণি সমন্বয়ে থাকায় মোট তড়িচ্চালক শক্তি হবে Es = E + E +…. n সংখ্যক পদ = nE এবং অভ্যন্তরীণ রোধ হবে rs =r+r+….. n সংখ্যক পদ = nr

:- Is=nER+nr

যে কোনো একটি কোষের প্রবাহের সমান হয়। এ সমবায় থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় না। 

সুতরাং যখন কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ r -এর তুলনায় বাইরের রোধ R অনেক বড় হয় তখন শক্তিশালী প্রবাহ পাওয়ার জন্য কোষের শ্রেণি সমন্বয় ব্যবহার করা হয়।

২. সমান্তরাল সমন্বয়

কতগুলো কোষ যদি এমনভাবে সাজানো থাকে যে, তাদের ধনাত্মক পাতগুলো একটি সাধারণ বিন্দুতে এবং ঋণাত্মক পাতগুলো অপর একটি সাধারণ বিন্দুতে সংযুক্ত থাকে তখন তাকে কোষের সমান্তরাল সমন্বয় বলে।

চিত্র :৩.৫

প্রবাহ নির্ণয় : ধরা যাক, সমান্তরাল সমন্বয়ে m সংখ্যক কোষ আছে যাদের প্রত্যেকের তড়িচ্চালক শক্তি E এবং অভ্যন্তরীণ রোধ r । এ সমন্বয়ের সাথে R মানের বাইরের রোধ সংযুক্ত আছে [চিত্র ৩.৫]। সমন্বয়ের মোট তড়িচ্চালক শক্তি Ep এবং তুল্য অভ্যন্তরীণ রোধ rp বর্তনীর প্রবাহ Ip হবে, ও'মের সূত্রানুসারে,

Ip=EpR+rp

 কিন্তু সমান তড়িচ্চালক শক্তিবিশিষ্ট কোষগুলো সমান্তরালে আছে বলে সমন্বয়ের কোষগুলোর মোট তড়িচ্চালক শক্তি যে কোনো একটি কোষের তড়িচ্চালক শক্তির সমান। 

অর্থাৎ Ep = E। আর কোষগুলো সমান্তরাল আছে বলে তাদের অভ্যন্তরীণ রোধগুলোও সমান্তরালে সজ্জিত,

সুতরাং Irp=lr+lr+...m সংখ্যক পদ

  =mr

বা, Ip=mEmR+r

সুতরাং যখন কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ r-এর তুলনায় বাইরের রোধ R ছোট হয় তখন শক্তিশালী প্রবাহ পাওয়ার জন্য সমান্তরাল সমন্বয় ব্যবহার করা হয়।

Content added || updated By
Promotion